কিভাবে ব্লগিং করে টাকা ইনকাম করবেন ২০২৩

শুধুমাত্র ব্লগিং করে মাসে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব! হ্যাঁ একদমই ভুল বলতেছি না। আপনার শখের বশে করা ব্লগিং হতে পারে আপনার ক্যারিয়ার! আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে কিছু ব্লগিং আইডিয়া শেয়ার করব যেগুলোর মাধ্যমে আপনারা ঘরে বসে মাসে হাজার হাজার ব্লগিং করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

ব্লগ বা ব্লগিং কি?

ব্লগিং, এক কথায় বলতে গেলে কোন বিষয়ে আপনি দক্ষ হলে বা সেই বিষয়ে আপনার কোন জ্ঞান থাকলে বা সেই বিষয় নিয়ে আপনি কোন সৃজনশীল লিখনী প্রকাশ করাই হলো ব্লগিং। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আমাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, দক্ষতা বা সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে ব্লগিং একটি দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও হাজার হাজার ব্লগার প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এমনকি ইতোমধ্যে অনেকেই ব্লগিংকেই তার ক্যারিয়ার হিসেবে নির্ধারণ করেছে। কিন্তু কিভাবে? যথাযথ প্ল্যান প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্লগিং করতে পারলে আপনিও মাসে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন শুধুমাত্র লেখালেখি করে তাও আবার ঘরে বসেই। আর একটা কথা বলে রাখি, ব্লগিং করতে আপনার একটি দামি কম্পিউটার থাকতে হবে এটা নয়; আপনার হাতে থাকে স্মার্টফোনের মাধ্যমে আপনি ব্লগিং করতে পারবেন আর ইনকাম তো অবশ্যই।

ব্লগিং কিভাবে শুরু করবেন?

ব্লগিং কিভাবে শুরু করবেন সেটা নিয়ে প্রাথমিক ধারনা থাকা জরুরি।

ব্লগিং করতে পারেন আপনি দুটো উপায়ে।

১. নিজের ব্লগ তৈরী করে

২. অন্যের ব্লগে লিখে।

এক্ষেত্রে অন্য ব্লগে লিখে টাকা ইনকামের সুযোগ কিছুটা কম। এজন্য নিজে ব্লগ তৈরী করাই তুলনামূলক ভালো অপশন। যদিও একটি ব্লগ তৈরী করা ও পুরোপুরি দাড় করানো একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এটার ফলাফল দীর্ঘমেয়াদি। আসুন জেনে নিই কিভাবে ব্লগ তৈরী করা যায়।

ব্লগিং প্লাটফর্ম নির্বাচন

আপনি যদি অন্যদের ব্লগে লিখতে চান, তাহলে অনেক ব্লগিং সাইট রয়েছে। যেমন: Medium, Hubspot Blog, Typepad, Tumblr ইত্যাদি। এর বাইরে যেগুলোর মাধ্যমে নিজের ব্লগ তৈরী করবেন সেগুলো ব্লগিং প্লাটফর্ম না বলে সিএমএস (কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) বলতে পারি। বর্তমানে দুটি জনপ্রিয় ব্লগিং সিএমএস হলো:

ওয়ার্ডপ্রেস

ব্লগার

ডোমেইন ও হোস্টিং নেওয়া

সিএমএস নির্ধারণ করার জন্য প্রয়োজন ডোমেইন হোস্টিং। ব্লগার হচ্ছে গুগলের ফ্রি ব্লগিং প্লাটফর্ম, এখানে আলাদা করে আপনাকে হোস্টিং কিনতে হচ্ছে না। তবে কাস্টম ডোমেইন এড করলে অবশ্যই আপনার ব্লগার ব্লগে প্রিমিয়াম লুক আসবে। তবে ব্লগারের ব্লগস্পট সাব ডোমেইন দিয়েও আপনি ব্লগ দাড় করাতে পারবেন ও আয়ও করতে পারবেন। আর অন্যদিকে ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য আপনি ডোমেইন হোস্টিং কিনতে হবে। এক্ষেত্রে আমি প্রিফার করবো বাইরে থেকে ডোমেইন হোস্টিং কিনতে। তবে দেশেও অনেক ভালো ভালো হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানি রয়েছে। যাদের ইন্টারন্যশনাল পেমেন্ট করার সুযোগ নেই তারা বাংলাদেশী কোম্পানী থেকে বিকাশ/নগদ পেমেন্টের মাধ্যমেই ডোমেইন হোস্টিং কিনতে পারবেন।

নিশ বা টপিক নির্বাচন

ব্লগিং শুরু করতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো টপিক বা নিশ সিলেকশন। অর্থাৎ আপনি কোন টপিকে ব্লগে লিখবেন। এক্ষেত্রে ব্লগ সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে।

মাল্টি নিশ

ম্যাক্রো নিশ

মাল্টি নিশের উদাহরণ নিয়ে বলতে গেলে আমাদের বঙ্গ উইকির উদাহরণ দেওয়া যায়। এখানে যেমন ব্লগিং নিয়ে কনটেন্ট আছে তেমনি কনটেন্ট আছে মোবাইল রিভিউ নিয়ে। অর্থাৎ মাল্টি নিশ মানে একাধিক টপিক নিয়ে লিখা। অন্যদিকে ম্যাক্রো নিশ বিষয়টা হলো একটি টপিকেই বিভিন্ন কনটেন্ট দেওয়া। ব্লগিং ক্যারিয়ারে কতোটা এগিয়ে যাবেন সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন নিশে কনটেন্ট লিখেন। নিশ সিলেকশন করার আগে একটু ঘাটাঘাটি করতে হবে। খেয়াল করতে হবে যে আপনি যে টপিকে লিখতে চাচ্ছেন সেটার সার্চ ভ্যালু আছে কিনা। পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে সে টপিকে গুগলে কতগুলো ব্লগ আছে, ইতোমধ্যে অনেক ব্লগ থেকে থাকলে নতুন ব্লগ বানিয়ে তাদেরকে টেক্কা দেওয়া তুলনামূলক কঠিন। আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, এমন টপিক নির্ধারণ করবেন যেটা সম্পর্কেকে আপনি ভালো জ্ঞান রাখেন। এতে করে আপনি লং টার্ম কনটেন্ট দিতে পারবেন, ধারাবাহিকতা থাকবে।

ব্লগিং করে টাকা আয়ের উপায়

ব্লগিং প্লাটফর্ম সম্পর্কে উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবেনা। সমষ্টিগত ভাবে ব্লগিং করে ইনকাম করার কয়েকটি সেক্টর নিয়ে আজকে আলোচনা করবো এবং এই ধরনের ব্লগিংয়ের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি ইনকাম করতে পারবেন। যেমন:

পার্সোনাল ব্লগিং

হিডেন ব্লগিং

গেস্ট ব্লগিং বা আর্টিকেল রাইটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

পার্সোনাল ব্লগিং করে টাকা ইনকাম:

প্রথমেই পার্সোনাল ব্লগিং, পার্সোনাল ব্লগিং বলতে বোঝাচ্ছে একটি ব্যক্তিগত ব্লগিং যেখানে আপনি নিজে লিখালিখি করবেন। যেটি হতে পারে গল্প, উপন্যাস, কবিতা থেকে শুরু করে রাজনীতি, প্রযুক্তি বা টিউটোরিয়াল বিষয়ক লিখালিখি। পার্সোনাল ব্লগিং করার জন্য আপনার প্রথমত একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আমার মতো ব্লগার থেকে ফ্রিতে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারেন। পার্সোনাল ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে ইনকামের প্রধান সোর্স হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখানো। ইউনিক ও কপিরাইট ফ্রি আর্টিকেল লিখে আপনি সহজে আপনার ওয়েবসাইটে গুগল এডসেন্স এড করতে পারবেন। এছাড়াও গুগল এডসেন্সের পাশাপাশি এর বিকল্প হিসেবে আরও অনেক ধরনের এড নেটওয়ার্ক রয়েছে যেগুলোতে কেউ আপনি বিজ্ঞাপন দেখি আপনার ওয়েবসাইট থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তবে গুগল এডসেন্স কে বলা হয় সোনার হরিণ! মোটামুটি ভালো মানের একটি ব্লগ থেকে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে মাসিক ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব।

হিডেন ব্লগ থেকে টাকা ইনকাম:

হিডেন ব্লগ? নামটা হয়তো আপনাদের সবার কাছে অপরিচিত লাগতেছে। লাগারই কথা তবে আমরা কিন্তু অনেক সময়ই হিডেন ব্লগ ইউজ করেছি, তবে এটার কোন ভালো নাম খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই আমি এটার নাম দিয়ে দিলাম হিডেন ব্লগ। এই হিডেন ব্লগকে আপনারা আবার একটি পার্সোনাল ব্লগও বলতে পারেন। হিডেন ব্লগের জাস্ট আপনার ব্লগের আর্টিকেলগুলো হিডেন থাকবে, সবাই আপনার আর্টিকেলগুলো পড়তে পারবে না। যারা আপনার আর্টিকেলটি পড়তে চাইলে তাদেরকে আপনার ওয়েবসাইটের মেম্বার হতে হবে। আপনার সাইটে এজন্য রেজিস্ট্রেশন ও লগইন অপশন চালু রাখতে হবে। আপনার আর্টিকেলগুলো পড়তে চাইলে বা আপনার ব্লগের মেম্বার হতে চাইলে পেমেন্ট করতে হবে। যারা পেমেন্ট করে আপনার ওয়েবসাইটে মেম্বার হবে তারাই শুধু আপনার ব্লগের আর্টিকেলগুলো পড়তে পারবে। এটাই হলো হিডেন ব্লগ বা মেম্বারশিপ ব্লগের মাধ্যমে ইনকাম করার পদ্ধতি। তবে আপনার আরেকটি বিষয় কি খেয়াল করেছেন? পার্সোনাল ব্লগের থেকে হিডেন ব্লগ থেকে দ্বিগুন টাকা ইনকাম করা যাবে! প্রথমত আপনি মেম্বারশিপ থেকে কিছু টাকা ইনকাম করতে পারবেন আবার আপনার ওয়েবসাইটে গুগল এডসেন্সও ব্যবহার করতে পারবেন! সো দেরি না করে, এই আইডিয়াটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।

গেস্ট ব্লগিং বা আর্টিকেল রাইটিং করে ইনকাম:

গেস্ট ব্লগিং অর্থাৎ অন্যের ওয়েবসাইটে ব্লগ প্রকাশ করা। আর সেই ওয়েবসাইট আপনাকে আপনার আর্টিকেলের উপর টাকা প্রদান করবে। পার্সোনাল ব্লগিংয়ের থেকে গেস্ট ব্লগিং এর একটি সুবিধা হল: এতে আপনার নিজের ওয়েবসাইট থাকার কোনো দরকার নেই। আর গেস্ট ব্লগিং ও আর্টিকেল রাইটিং এর মধ্যে একটি পার্থক্য রয়েছে। গেস্ট ব্লগিং করলে আপনার লিখাটি সরাসরি অন্যের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে, আর আর্টিকেল রাইটিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার আর্টিকেলটি সেল করতে হবে। আর্টিকেল রাইটিং এর ক্ষেত্রে আপনি পে পার আর্টিকেল হিসেবে টাকা পাবেন। একটি ভাল মানের আর্টিকেল ৫ ডলার থেকে ৫০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তবে অবশ্যই বাংলা আর্টিকেলের থেকে ইংরেজি আর্টিকেলের সম্মানী বেশি। আপনি চাইলে বাংলাদেশি গেস্ট ব্লগিং প্লাটফর্ম ট্রিকবিডি ও টেকটিউনস থেকে ইনকাম করতে পারেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ঘরে বসে আয় করুন:

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শব্দটার সাথে আমরা মোটামুটি কমবেশি সবাই পরিচিত। এক কথায় বলতে গেলে বিজ্ঞাপন বা স্পন্সর ব্লগিংকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা যায়। ধরুন আপনি আইফোন ১১ এর রিভিউ নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখলেন, আর সেই আর্টিকেলে একটি লিংক দিয়ে দিলেন। সেই লিংকে ক্লিক করে কেউ আইফোন ১১ টি কিনলে আপনি পণ্যের মূল্যের শতকরা হিসেবে কিছু মুনাফা পাবেন। সহজ ভাষায় এটাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চাইলে আপনার নিজের একটি ওয়েবসাইট থাকলে ভালো, না থাকলেও আপনি আপনার ফেসবুকের মাধ্যমেও মার্কেটিং করতে পারবেন। মোটকথা লিংকে ক্লিক করে কেউ পণ্য কিনলে আপনি সেটা থেকে মুনাফা পাবেন। আর ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি পরিমাণ টাকা ইনকাম করা সম্ভব অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে। ধরুন আপনাকে একটি পণ্য বিক্রির ১০ শতাংশ মুনাফা দেওয়া হবে, তাহলে একবার ভাবুন পণ্যটির দাম এক লাখ টাকা হলে আপনি ১০ হাজার টাকা মুনাফা পাচ্ছেন। বর্তমান সময়ের সবথেকে জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের প্ল্যাটফর্ম হলো অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম।

ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়?

ব্লগিং করে কত আয় করবেন সেটা আপনার প্রচেষ্টা ও রেভিনিউ মডেলের উপর নির্ভর করবে। তবে মাথায় রাখতে হবে যে আজকে ব্লগিং শুরু করে কালকেই টাকা ইনকাম করতে পারবেন। ধৈর্য্য আর ধারাবাহিকতা নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। আপনার রেভিনিউ মডেল যদি গুগল অ্যাডসেন্স হয় তাহলে আপনার কনটেন্টের উপর নির্ভর করবে আপনার আয়। বাংলা কনটেন্টের থেকে ইংরেজি কনটেন্টের আয় বেশি। তবে বাংলা কনটেন্ট লিখে ভালোমতো এসইও করতে পারলে ভালো পরিমাণ আয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে মাসে অনায়াসে ১০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

শেষ কথা

আশা করি ব্লগিং কিভাবে আপনার ক্যারিয়ার হতে পারে সেটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। আর পাশাপাশি ব্লগিং করে কিভাবে মাসে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব সেই বিষয়টিও ক্লিয়ার হয়ে গেছে।

আরও ব্লগ নতুন ব্লগ
কোন কমেন্ট করা হয়নি
কমেন্ট করুন
comment url

আরও পড়ুন...